তিনি ব্যারিস্টার সুমন নামেই সবার কাছে পরিচিত। তার পুরো নাম সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি ১৯৭৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার পীরবাজার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যারিস্টার সুমনের বর্তমান বয়স ৪৫ বছর চলমান। তার বাবা এর্শাদ, যিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী এবং মাতা আম্বিয়া খাতুন হলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে ব্যারিস্টার সুমন সবার ছোট।
ব্যাক্তিগত জীবন সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বিবাহিত। তিনি ২০১০ সালে শাম্মী আক্তারকে বিয়ে করেন। তার এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। তার ছেলের নাম সৈয়দ শায়ন হক এবং মেয়ের নাম সৈয়দা রামিসা হক।
স্থানীয় এক কেজী স্কুল থেকে তার শিক্ষার হাতে খড়ি হয়। তারপর দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (ডিসিপি হাইস্কুলে) থেকে তিনি এসএসসি পাশ করেন। এরপর দেশের সর্বচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ পাশ করে ইংল্যান্ডে চলে যান। এবং সেখান থেকে তিনি ব্যারিস্টারি পাশ করেন।
লন্ডনে পড়াকালীন সময়ে সুৃমন খুবই কষ্টের জীবন অতিবাহিত করেছেন। তবে তিনি মনে করেন এই কষ্ট গুলোই তাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ইংল্যান্ডে সুমনের যে আত্মীয় স্বজনরা ছিলেন তারা কেউই তাকে সহযোগিতা করেনি। সেখানে তিনি ট্রলিম্যান হিসেবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ যাদেরকে কুলি বলা হয়। বিমানবন্দরে ভিআইপিরা যখন ট্রলি ফেলে রেখে যেতেন তখন ট্রলি গুলো নিয়ে এসে তিনি এক জায়গায় রাখতেন।
তিনি যে কুলির কাজ করতেন এটা তিনি তার বক্তব্যে সবসময় স্বীকার করেছেন। তিনি মনে করেন কেউ যদি চুরি না করে, কারো হক নষ্ট না করে তাহলে কোন কাজই ছোট নয়। এছাড়া তিনি ড্রাইভারিও করেছেন। এসব কাজ করে তিনি কিছু টাকা জমান। এবং সে টাকা দিয়ে তিনি ২০০৮ সালে বার অ্যাট ল, শুরু করেন। লন্ডনে বার অ্যাট ল, শেষ করার পর অনেকেই তাকে সেখানে থেকে যাওয়ার জন্য বলেছিল। কিন্তু তিনি দেশের মায়া ত্যাগ করতে পারেন নি। তার মতে লন্ডনে অনেকে ব্যারিস্টার আছে সেখানে কাজ করার জন্য। কিন্তু তার মাতৃভূমিতে একটি ব্যারিস্টার ফিরে যেয়ে যদি নূন্যতম কিছু হলেও করতে পারেন তাহলে তার দেশ উপকৃত হবে।
কর্মজীবনে সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনন একজন আইনজীবী। তিনি ২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
তিনি ময়লার ডাস্টবিন থেকে শুরু করে রাস্তা ঘাটে যে কোন অনিয়মের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে কথা বলে থাকেন। ২০১৯ সালের শুরুতে তিনি কাজ শুরু করেন রাস্তা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ নিরাপত্তা নিয়ে। এবং একই বছর ফেব্রুয়ারিতে ভুল জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বসানোর অভিযোগে সকল বিদ্যুৎ কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। যার ফলে সরকার সেসময় এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। তিনি তার উপজেলা চুনারুঘাটে নিজস্ব অর্থায়নে ৪২ টারও বেশি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করেন। ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে ব্যারিস্টার সুমন দেশ এবং দেশের বাইরে বিশ্বজোড়া বাঙালিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বর্তমানে ফেসবুকে তার অনুসারীর সংখ্যা ৫.৬ মিলিয়ন।
তিনি তার নামে একটি ফুটবল একাডেমি (ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি) প্রতিষ্ঠিত করেন। তার এই ফুটবল একাডেমি দেশে এবং দেশের বাইরে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। রাজনৈতিক জীবন সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন যুবলীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে ঈদল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন।
